
জনাব আব্দুল জলিল
সভাপতি
ও রাজশাহী জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশের একটি প্রাচীন শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক এবং জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ‘রাজশাহী এসোসিয়েশন’ বৃটিশ আমলে ১৮৭২ সালে তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী জেলার প্রজাবৎসল, দানশীল ও জনকল্যাণকর নানা মহৎ কাজের সঙ্গে সংযুক্ত রাজা জমিদারগণ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের উদ্যোগ ও অর্থায়নে ১৮৭৩ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ‘রাজশাহী সদর হাসপাতাল”, দেশের খ্যাতনামা প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর’, প্রতিষ্ঠাসহ পানীয় জলের ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগসহ নানামুখী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাঁরা রাজশাহীর জনজীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। বিশেষত ১৮৭২ সালে এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজা প্রমথনাথ রায়বাহাদুর এবং প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বাবু রাজকুমার সরকার (বিশ্বনন্দিত ইতিহাসবিদ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার যদুনাথ সরকারের পিতা) এবং অন্যান্য মহৎপ্রাণ মনীষীদের অবদানের কথা মনে রেখে তাঁদের অমর স্মৃতির প্রতি বারবার গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই।
সবচেয়ে দুঃখজনক কথা হলো ১৯৪৬ সালে মারাত্নক ও ভয়াবহ দাঙ্গা এবং ১৯৪৭ সালে দেশ-বিভাগের ফলে রাজশাহীর রাজা ও জমিদারগণ কলকাতা চলে যান। এরফলে, এই জনকল্যাণকর মহান প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীর কতিপয় স্বার্থান্বেষী। ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হয় এবং ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তারা এসোসিয়েশনের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ভোগ দখল করতে থাকে। এমন অবস্থায় এক পর্যায়ে এ প্রতিষ্ঠানটি মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ার মতো হয়ে যায়। সর্বাধিক আনন্দ ও গৌরবের বিষয় হলো আমার একজন পূর্বসূরি স্বনামখ্যাত ও জননন্দিত জেলা প্রশাসক সে সঙ্গে – মানবদরদী, সমাজহিতৈষী, অত্যন্ত দৃঢ়চেতা ধী-শক্তির অধিকারি এবং সর্বমহলে তাঁর আকাশচুম্বী গ্রহণযোগ্যতা তৎকালীন জেলা প্রশাসক প্রয়াত এ.কে.এম আবদুস সালাম সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৮৫ সালের ১লা জানুয়ারি পুনরায় পুনর্গঠিত হয় ‘রাজশাহী এসোসিয়েশন’। সে সময় তাঁকে যারা সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রত্যেকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আশা ও স্বপ্নের কথা, রাজশাহী এসোসিয়েশন’ বর্তমানে শিক্ষা-দীক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সমাজসেবা মানবসেবা থেকে শুরু করে নানারকম গুরুত্বপূর্ণ কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। রাজশাহী এসোসিয়েশন থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ পত্র-পত্রিকা ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এবং আগামীতে এ প্রতিষ্ঠানের সার্ধশতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে (১৮৭২-২022) গুরুত্বপূর্ণ ও মহামূল্যবান গ্রন্থ – স্মারকপত্র ইত্যাদি প্রকাশিত হবে। সেই উৎসবকে সফল করার জন্য সম্মানিত সদস্যবৃন্দসহ রাজশাহীবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করি, আমাদের প্রত্যেকের প্রচেষ্টায় অবশ্যই প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে। আমি লক্ষ্য করেছি-রাজশাহী এসোসিয়েশনের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত উদার ও মুক্ত মনের অধিকারী। আর আমি আরো বিশ্বাস করি, কোন মহৎ কাজ কখনোই বৃথা যায় না।
এ সঙ্গে বলবো, করোনার ভয়াবহ ও লোমহর্ষ অবস্থার কারণে রাজশাহী এসোসিয়েশন থেকে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন কাজ করা সম্ভব হয়নি । তবে, একেবারেই যে কোন কিছু হয়নি সে কথাও ঠিক নয়। সেই কাজেরই ধারাবাহিকতায় আবারো আমরা গুণিজন সংবর্ধনার আয়োজন করেছি। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন তাঁদের মধ্য হতে এ বছর ২০২২ সালে ছয়জন গুণিমানুষকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে। আমি আনন্দচিত্তে তাঁদের সাধুবাদ ও অভিনন্দন জানাই। পরিশেষে বলবো, গুণিজন সংবর্ধনা আয়োজন এবং এ উপলক্ষে বর্ধিত কলেবরে একটি আকর্ষণীয় স্মারকপত্র প্রকাশিত হবে জেনে আমি বিমুগ্ধচিত্তে আনন্দ প্রকাশ করছি। আর এ মহৎ ও অনুকরণীয় কাজে যাঁরা দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করেছেন,তাঁদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ প্রতিষ্ঠানটি আমাদের একেবারে প্রাণের প্রতিষ্ঠান। আমি আনন্দচিত্তে রাজশাহী এসোসিয়েশনের প্রতিটি কাজের সফলতা কামনা করছি।